,

আগাম নির্বাচন দাবিতে ইমরানের লং মার্চ শুরু

সময় ডেস্ক : আগাম নির্বাচনের দাবিতে ইসলামাবাদ অভিমুখে লং মার্চ শুরু করেছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান ইমরান খান। গতকাল শুক্রবার লাহোরের লিবার্টি চক থেকে এ লং মার্চ শুরু হয়। নানা ইস্যুতে সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর দলের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে এ লং মার্চ হচ্ছে। এরই মধ্যে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) সঙ্গে বাহাসে জড়িয়েছেন দেশটির সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। পিটিআইপ্রধান ও আইএসআইপ্রধান একে অপরকে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করেছেন।
আইএসআইর দাবি, অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়েছিলেন ইমরান। অন্যদিকে ইমরান বলেছেন, আইএসআইর সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক ও নজিরবিহীন। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নেওয়াজ (পিএমএল-এন) দলের নেতা শাহবাজ শরিফ। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই। এর আগে ২৫ মে পিএমএল-এন সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম লং মার্চ করে পিটিআই। নতুন লং মার্চটি আগামী ৪ নভেম্বর ইসলামাবাদে পৌঁছাতে পারে। জিও টিভি অনলাইন জানায়, ইসলামাবাদে অবস্থান নিতে পারেন ইমরান ও তাঁর সমর্থকরা। তবে ইমরান বলেছেন, তাঁদের লং মার্চ শান্তিপূর্ণ। এটি নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে। লাহোরে পিটিআইর বিপুলসংখ্যক সমর্থকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা একটি অভ্যুত্থান দেখছেন।’ এ লং মার্চকে কেন্দ্র করে পুরো ইসলামাবাদে ১৩ হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ইমরানের ক্ষমতায় থাকার শেষদিকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে নানা কারণে তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে। তিনি সেনাবাহিনীকে ঘায়েল করতে একের পর এক বক্তব্য দেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। অবশেষে বৃহস্পতিবার মুখ খুলল তারা। আইএসআই সংবাদ সম্মেলন করে ইমরান খানকে কটাক্ষ করেছে। দ্য ডন অনলাইন জানায়, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সংবাদ সম্মেলনের ঘটনা পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম।
ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশন্সের (আইএসপিআর) সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক আরশাদ শরিফ হত্যাকাণ্ড ও ইমরান খানকে নিয়ে কথা বলেন আইএসআইপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আহমেদ আনজুম। তিনি বলেন, ইমরান সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে রাতে সাক্ষাৎ করে দিনের বেলা তাঁকে দেশদ্রোহী বলতে পারেন না। আইএসআই ডিজি বলেন, যদি সেনাপ্রধান রাষ্ট্রদ্রোহীই হবেন, তাহলে তিনি (ইমরান) কেন গোপনে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন? জেনারেল আনজুম বলেন, সেনাবাহিনী বেআইনি সিদ্ধান্তের অংশ হতে উত্থাপিত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। এ প্রত্যাখ্যান কেবল এক ব্যক্তির (সেনাপ্রধান) সিদ্ধান্ত নয়। এটা পুরো সংস্থার সিদ্ধান্ত। আইএসআই প্রধান বলেন, তিনি দেখছেন, অব্যাহতভাবে মিথ্যা বলা হচ্ছে। এসব মিথ্যাকে গ্রহণ করা হচ্ছে। এ জন্য বাধ্য হয়ে প্রকাশ্যে এসেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক আরশাদ শরিফ হত্যাকাণ্ডে সেনাবাহিনীর হাত নেই বলেও দাবি করা হয়। সম্প্রতি কেনিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আরশাদ শরিফ। এ নিয়ে দেশটিতে তোলপাড় চলছে। ইমরান খান একে টার্গেটেড হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে আইএসআইর সংবাদ সম্মেলনের কঠোর সমালোচনা করেছেন পিটিআইপ্রধান ইমরান। তিনি সেনাবাহিনীকে ‘রাজনৈতিক প্রভাবিত’ বলে মন্তব্য করেন। রাজনৈতিক চাপের মুখে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। ৯২ নিউজের সাংবাদিক আমির মতিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইমরান বলেন, সংবাদ সম্মেলনটি নজিরবিহীন। এ রকম ঘটনা তিনি আগে কখনও দেখেননি।
ওই সংবাদ সম্মেলনের জবাব দিলে দেশের ‘অনেক ক্ষতি’ হবে জানিয়ে ইমরান বলেন, যদি তাঁরা এভাবে সংবাদ সম্মেলন করেন, আর তিনি এসবের জবাব দেন, তাহলে তা সরাসরি সামরিক বাহিনীর ওপর গিয়ে পড়বে। তিনি সব সময় গঠনমূলক ও ভালোর জন্য সমালোচনা করেন।


     এই বিভাগের আরো খবর